অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

শেখ হাসিনা: ‘বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি’


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়নি। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) গণভবনে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তারা অপরাধ করেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। “এসব অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে;” যোগ করেন শেখ হাসিনা।

অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, দুর্নীতি, অস্ত্র চোরাচালান ও গ্রেনেড হামলার মতো অপরাধ করার জন্য এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

গত ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন প্রতিহত করতে বিএনপি ২০১৩ ও ২০১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছিলো বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “ বিএনপি ও তাদের জোট সদস্যরা ৩ হাজার ৮০০ কার, বাস, লঞ্চ ও ট্রেন পুড়িয়েছে।”

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সহিংসতার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, “তারা (বিএনপি) ২৮ অক্টোবর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে এবং নির্বাচন বানচাল করতে ট্রেনে আগুন দিয়ে একজন মা ও তার সন্তানকে হত্যা করেছে।”

তিনি প্রশ্ন করেন, যারা এসব কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কি মামলা করা উচিত নয়? মানুষ কি তাদের পূজা করবে? “এখন বিএনপি সব জায়গায় বলে বেড়াচ্ছে যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া উচিত কীসের জন্য মামলাগুলো করা হয়েছে;” আরো বলেন শেখ হাসিনা।

বিএনপির ৬০ লাখ নেতা-কর্মী কারাগারে আছে এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন শেখ হাসিনা। বলেন, দেশের কারাগারগুলোতে এত লোককে জায়গা দেয়ার সক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, “তারা দাবি করছে যে তাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে, কিন্তু কারাগারগুলোতে এত লোককে জায়গা দেয়ার সামর্থ নেই।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি বিএনপির এত লোক কারাগারে আটক থাকে, তার মানে এখন যারা কারাগারে আছে তারা সবাই তাদের লোক এবং সেখানে অন্য কোনো অপরাধী নেই। এর অর্থ হচ্ছে ওখানকার সব অপরাধী (যারা কারাগারে আছে) বিএনপির; আরো বলেন তিনি।

বিএনপি শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর সহিংসতা ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তার সরকার প্রতিশোধ নিতে যায়নি, বরং দেশের উন্নয়ন ও জনগণের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে মেধা ও শক্তি কাজে লাগিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপির সৌভাগ্য যে আমরা ক্ষমতায় আছি। আমরা তাদের মতো প্রতিশোধপরায়ণ নই বলে তারা এখনো কথা বলার সুযোগ পায়। তারা সারাদিন লাউড স্পিকার ব্যবহার করে কথা বলে এবং তারপর বলে যে তারা কথা বলার সুযোগ পায় না।”

রিজভী: ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের কারাগারে রেখে অধিকার বঞ্চিত করা হচ্ছে’

এদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দলের অনেক নেতা-কর্মীকে সরকার কারাগারে নিক্ষেপ করে তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।

শুক্রবার, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী নেতাদের মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক অবস্থান কর্মসূচিতে রিজভী এ কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, বিনা কারণে মাসের পর মাস কারাগারে বন্দী থাকতে থাকতে কারাগারগুলো বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর স্থায়ী আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি।

রিজভী অভিযোগ করেন যে বিএনপি মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিবের মতো শীর্ষ নেতারা তিন-চার মাস ধরে কারাভোগ করে মুক্তি পেয়েছেন।

শেখ হাসিনার বিএনপি নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানোর নীতি এখনো শেষ হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে ভয় পান এবং জানেন যে তার পক্ষে কোনো জনসমর্থন নেই।

জনগণের সমর্থনহীন সরকার স্বৈরাচারী হয়ে যায় বলে উল্লেখ করেন রিজভী। তিনি বলেন, জনগণ যখন অধিকারের জন্য আওয়াজ তোলে তখন তাদের দমন করা হয়।

আটকে রাখা, নির্যাতনের জন্য আয়না ঘর তৈরি করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে হত্যা করা এবং বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে দলীয় ক্যাডারদের ব্যবহার করার কৌশল নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

রিজভী দাবি করেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার, ২৫ থেকে ২৬ হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

রিজভী আরো বলেন, বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এখনো কারাগারে রয়েছেন। আর কয়েকজন ৩ থেকে ৪ মাস কারাভোগের পর বের হতে পেরেছেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম দাবি করে যে, ১৪ সপ্তাহে ৭৯টি মামলায় ১ হাজার ২৪৯ জন বিএনপি নেতা–কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আরো বলেছে, সরকার গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির ২১ হাজার ৮৩৫ জন নেতা-কর্মীকে কারাগারে বন্দী করেছে।

XS
SM
MD
LG