অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আফগানিস্তান বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় নিম্নতম অবস্থানে রয়েছে


কাবুলে আফগান ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে 'বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম ডে' উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের সময় তালিবান নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য নজরদারি করছেন। ৩ মে, ২০২৩। ফাইল ফটো।
কাবুলে আফগান ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে 'বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম ডে' উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের সময় তালিবান নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য নজরদারি করছেন। ৩ মে, ২০২৩। ফাইল ফটো।

আফগানিস্তানে রিপোর্টার এবং মিডিয়া বিশ্লেষকরা স্থানীয় সাংবাদিকদের জন্য ক্রমাগতভাবে সেন্সরশিপ বৃদ্ধি এবং অবস্থার অবনতির কথা বলছেন।

কাবুল-ভিত্তিক একজন সাংবাদিক, যিনি ভয়ে পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি, তিনি বলেছেন,সেখানকার মিডিয়া মনে করে যে তালিবানের অনুমোদন ছাড়া "কোনও রিপোর্ট প্রকাশ করা যাবে না"।

এই সাংবাদিক এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানের রাজনীতি এবং নিরাপত্তা বিষয়ক খবর নিয়ে কাজ করছেন। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন যে তিনি সরাসরি যে কোন ঘটনাস্থলে যেতে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা পেতে এবং কর্মকর্তাদের ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করতে সক্ষম হতেন।

“কিন্তু এখন এমনটা করার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারে না। আমাদের অবশ্যই কোনো রিপোর্ট করতে গেলে সর্ব প্রথমে ঐ ঘটনা সম্পর্কে তালিবানের ভাষ্য নিতে হবে, অন্যথায় আমরা এটি প্রকাশ করতে পারব না।”

মিডিয়ার স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন বলছেন, দেশের সাংবাদিকরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে তার মধ্যে মাত্র একটি হচ্ছে বিষয়বস্তুর ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ। নারী সাংবাদিকরা পোষাক কোড প্রবিধানের সম্মুখীন হচ্ছেন। আর শুধুমাত্র এপ্রিলেই, খোস্ত প্রদেশে তালিবান কর্মকর্তারা তিনজন সাংবাদিককে আটক করে এবং ব্যক্তি-মালিকানাধীন চ্যানেল নূর টিভি এবং বারিয়া টিভির প্রদর্শন বন্ধ করে দেয়।

কর্মকর্তারা বলেছেন যে সম্প্রচারকারীরা "জাতীয় ও ইসলামিক মূল্যবোধকে" সম্মান করছে না।

সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ রিপোর্টার্স ক্লাব অ্যান্ড জার্নালিস্ট ফোরামের আফগান চ্যাপ্টারের সভাপতি গুল মোহাম্মদ গ্রান বলেন, আফগান সাংবাদিকরা খবর সংগ্রহ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে, কিন্তু এটা একটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার।

গ্রান বলেছেন, “সেন্সরশিপ দিন দিন বাড়ছে। তালিবানের লক্ষ্য মিডিয়া যা বলে তা নিয়ন্ত্রণ করা। নিয়ন্ত্রণ দ্বারা, আমি বলতে চাচ্ছি, তারা যা চায় তা কভার করা হয়, এবং তারা যা চায় না তা কভার হয় না।"

এই পরিবেশটি ২০২৪ সালের বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে প্রতিফলিত হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, আফগানিস্তান গত বছরের তুলনায় ২৬ পয়েন্ট নেমে গেছে।

সেলিয়া মার্সিয়ার, যিনি আরএসএফের জন্য এই অঞ্চলটির সংবাদ সংগ্রহ করেন, তিনি বলেছেন, তালিবানের অধীনে, আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার "সবচেয়ে নিপীড়নকারী দেশ"।তিনি আরো বলেছেন, "সব ধরনের নির্দেশিকা[গুলি] রয়েছে যা সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করছে।”

তালিবানের মুখপাত্র বা তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভয়েস অফ আমেরিকার মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে তালিবান এর আগে বলেছিলো যে মিডিয়া আউটলেটগুলি দেশের আইন ও ইসলামিক মূল্যবোধ মেনে চললে সরকারের কাছ থেকে সীমাহীন স্বাধীনতা এবং সমর্থন রয়েছে।

তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তান সাংবাদিক কেন্দ্র ৪৫০ টিরও বেশি মিডিয়া লঙ্ঘনের ঘটনা রেকর্ড করেছে।

কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ কুরাইশি বলেন, "এর মধ্যে রয়েছে তিনজন সাংবাদিক নিহত, ২১৯ জনকে আটক এবং হুমকি ও শারীরিক সহিংসতার ২৩৫টি মামলা।"

কুরাইশি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন যে তালিবান যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, তারা ঘোষণা করেছিল যে দেশের বিদ্যমান মিডিয়া আইন কার্যকর থাকবে। কিন্তু তারপর "তারা মিডিয়া আইনের বিরোধী প্রায় ১৭টি আদেশ জারি করেছে।”

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস এশিয়া প্রোগ্রামের প্রধান বেহ লিন ই বলেছেন, তালিবান মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে যাতে আফগান এবং বিশ্ব "দেশে কী ঘটছে তা জানতে না পারে।"

এই নিবন্ধটি ভয়েস অফ আমেরিকার আফগান সার্ভিস থেকে নেয়া হয়েছে।

XS
SM
MD
LG