অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে ‘ভিত্তিহীন’ তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশের


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন। ২৫ এপ্রিল, ২০২৪।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন। ২৫ এপ্রিল, ২০২৪।

বাংলাদেশকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং নির্দিষ্ট কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ‘মূল্যায়ন করতে শুধু ব্যর্থই হয়নি, বরং অবমূল্যায়ন করেছে’, যা এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোবল ও কার্যকারিতার জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন সাংবাদিকদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনটি নিয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন প্রতিবেদনে স্থান পায়নি। অন্যদিকে, বিচ্ছিন্ন ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।”

সেহেলী সাবরীন বলেন, “প্রতিবেদনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়লে এটি স্পষ্ট হবে, এটি পৃথকভাবে রিপোর্ট করা বা কথিত ঘটনাগুলোর পরিপূর্ণ রেফারেন্স দেওয়া হয়নি। এটি সরলীকরণ অনুমাননির্ভর তথ্যে ভরপুর।”

ইসরায়েলি বাহিনীর গাজায় অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার বিষয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। একইসঙ্গে আশা প্রকাশ করেছে, ফিলিস্তিনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিরপরাধ নারী ও শিশু হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করবে।

সেহেলী সাবরীন বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন অজুহাতে এবং বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে অস্থিরতা, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির বিষয়টি প্রতিবেদনে অনুপস্থিত।

তিনি বলেন, বেশির ভাগই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (বেনামী উৎসসহ) কাছ থেকে পাওয়া অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তৃত করা। যার মধ্যে অনেকগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমর্থিত।

তিনি বলেন, “প্রতিবেদনটি সহজাত পক্ষপাতদুষ্ট, এটি বেশ স্পষ্ট।”

বাংলাদেশ সরকার অবশ্য বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের অব্যাহত আগ্রহের প্রশংসা করেছে।

সেহেলী সাবরীন বলেন, “আমরা যতই প্রত্যাশা করি না কেন, বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। যদিও মানবাধিকার কোনো শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তবে আর্থ-সামাজিক সীমাবদ্ধতার কারণে প্রায়ই এসব অধিকার আদায়ের গতিকে সীমাবদ্ধ করে।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। “প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।”

যেসব ক্ষেত্রে আরও উন্নতি প্রয়োজন সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে বর্তমান সরকার, ২০০৯ সাল থেকে টানা মেয়াদে মানবাধিকার পরিস্থিতির অর্থবহ অগ্রগতি করতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।

সেহেলী সাবরীন আরও বলেন, “যেকোনো বিচক্ষণ পর্যবেক্ষক লক্ষ্য করবেন, এই জাতীয় প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, প্রবীণ ব্যক্তিদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারের সুবিধা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা এবং আরও অনেক কিছুতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।”

তিনি বলেন, প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও এটি বিএনপি ও তার রাজনৈতিক মিত্রদের সহিংসতা ও ভাঙচুরের বিষয়টি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে এবং এর ফলে সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

তিনি বলেন, “এ ধরনের পরিকল্পিত প্রচারণা থেকে জনসাধারণের জীবন, শৃঙ্খলা ও সম্পত্তি রক্ষায় আইনানুগ পদক্ষেপ ও প্রতিকারের চেষ্টা করার রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপকেও প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে। এটি খুবই হাস্যকর।”

সেহেলী সাবরীন আরও বলেন, এটা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করেছে এবং যেকোনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্ণ পেশাদারত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে।

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের আন্তরিক সমর্থন ও পেশাদারত্বের ভিত্তিতে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং বিএনপি ও অন্য দলের বর্জন সত্ত্বেও ৪২ শতাংশ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।”

সেহেলী সাবরীন বলেন, “মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেদনে বারবার বেশ কিছু অভিযোগ বা অনুযোগ উঠে এসেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।”

উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ‘শরণার্থী’ বা ‘রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি’ হিসেবে অভিহিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা মিয়ানমারের নাগরিক বা বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতির বৈধ দাবিকে ক্ষুণ্ন করছে।

অন্য একটি উদাহরণে তিনি বলেন, কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে দেশের সাংবিধানিক বিধানের পরিপন্থী ‘আদিবাসী জনগণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা অযৌক্তিক উত্তেজনা ও বিভাজনকে উসকে দেওয়ার প্রচেষ্টার নামান্তর।

আবার, কিছু ক্ষেত্রে, প্রতিবেদনটি আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিনিময় করা অকাট্য প্রমাণ বা তথ্য বাদ দিয়েছে বা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শাহীন মিয়া ও মোহাম্মদ রাজু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে, যাতে ঘটনাগুলো আইনের আওতাভুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, “জেসমিন সুলতানার ক্ষেত্রে যে বিচারিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রতিবেদনে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি, বিশেষ করে চলমান যথাযথ প্রক্রিয়ার বিষয়টি।”

সেহেলী সাবরীন বলেন, “একইভাবে, শ্রম অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো, বিশেষত ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধকরণ এবং কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, বরাবরের মতোই প্রতিবেদনে আইনগত কর্মকাণ্ডের চিত্র ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে, “একইভাবে, প্রতিবেদনে শ্রম অধিকার ইস্যু, বিশেষত ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন এবং কার্যক্রম সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, বরাবরের মতো এবারও কারখানা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি সম্পত্তি বা ব্যবস্থাপনা কর্মীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের নামে অযাচিত বাধা বা ভাঙচুরের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের গৃহীত আইনানুগ পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গৃহীত প্রশাসনিক ও বিচারিক পদক্ষেপের বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে প্রতিবেদনে মানবাধিকারের পদ্ধতিগত অপব্যবহারের অংশ হিসেবে বেসরকারি ব্যক্তি বা সংস্থার দ্বারা সংঘটিত ঘটনাগুলো প্রকাশের প্রবণতা বজায় রাখা হয়েছে।

সাধারণভাবে, বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক প্রতিবেদনটি নজরে নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সব নাগরিকের মানবাধিকারের পূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখতে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রক্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য আন্তর্জাতিক অংশীদার এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রত্যাশায় রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে নতুন এক প্রতিবেদনে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকায় নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনে (এইচআরআর) থাকা দেশভিত্তিক প্রতিবেদনগুলো আইনি সিদ্ধান্ত; দেশগুলোর ক্রমবিন্যাস করে না বা তুলনা করে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন খবর রয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন, বিধিবহির্ভূত ধরপাকড়ের বিষয়টি এসেছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়া, রাজনৈতিক গ্রেপ্তার, মত প্রকাশে বাধা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, শান্তিপূর্ণ সভা–সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আরও বলা হয়েছে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নেই।

যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি দেওয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন, এমন কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত ও শাস্তি দিতে সরকার গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার বা সরকারি সংস্থা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিধিবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে মোট কতজন নিহত হয়েছে, সেই সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি এবং ঘটনাগুলো তদন্তে স্বচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, বলা হয় প্রতিবেদনে।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিগত বছরের তুলনায় কমেছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৮ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকাকালে মারা গেছেন। আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন একই সময়ে ১২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে।

বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, হয়রানি ও প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপের ভয়ে সংবাদমাধ্যমকর্মী ও ব্লগাররা সরকারের সমালোচনার ক্ষেত্রে চুপ থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

ঢাকায় নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আরও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট প্রকাশিত ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি বাস্তব ও বস্তুনিষ্ঠ দলিল। ২০২৩ সালের হিউম্যান রাইটস রিপোর্ট (এইচআরআর) ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলকে নিয়ে কাজ করেছে।

প্রতিবেদনে পৃথকভাবে মানবাধিকার অবমাননা ও লঙ্ঘনের ওপর বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের বিস্তৃত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যা সরকার, মানবাধিকারের সমর্থনে কাজ করা ব্যক্তি, সাংবাদিক এবং নির্দিষ্ট দেশ ও অঞ্চলগুলোতে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ব্যক্তিদের ব্যবহারযোগ্য একটি হাতিয়ার সরবরাহ করে।

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০২৩ বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের অবিচার প্রকাশ করেছে বলে উল্লেখ করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, “প্রতিবেদনে গুম, গুপ্তহত্যা ও নির্যাতনসহ বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করার নাগরিক অধিকার হরণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।”

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতার ও তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দানসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। অবিচার ও নিষ্ঠুরতার দৃশ্যমান ঘটনাগুলোর মাধ্যমে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির আসল রূপ তুলে ধরা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন রিজভী।

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো অফ ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রবার্ট এস গিলক্রিস্ট মানবাধিকার প্রতিবেদন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেছেন।”

রিজভী বলেন, গিলক্রিস্ট সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কারসাজির মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ১/১১-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা দেওয়া হয়েছে; আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছিল ৪টি মামলা।

“শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তড়িঘড়ি করে নিজের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা প্রত্যাহার করিয়েছেন,” রিজভী বলেন।

তিনি আরও বলেন, “আমরা অনেকবার এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। এবার তা যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টেই উঠে এসেছে। মানুষ বিশ্বাস করে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার খালেদা জিয়া। এবার গণতান্ত্রিক বিশ্ব তাদের বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা তুলে ধরেছে।”

XS
SM
MD
LG