অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে আবারও ৭২ ঘণ্টার তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি


পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে, বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে, বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) তাপপ্রবাহ সম্পর্কিত সতর্কতা জারি করেছে।

সতর্কতায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, এই সময়ে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় ‘অস্বস্তি’ বাড়তে পারে।

এর আগেও ১৯ ও ২২ এপ্রিল ৭২ ঘণ্টার সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।

এ ছাড়া, রবিবার বা সোমবারের দিকে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

খুলনা বিভাগসহ বাংলাদেশের ৬ জেলায় বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ

এদিকে খুলনা বিভাগসহ বাংলাদেশের ৬ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের নিয়মিত বুলেটিনে সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টার বার্তায় জানিয়েছে, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

অধিদপ্তর জানিয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

এ ছাড়া, দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

এতে আরও বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।

সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে আবহাওয়া অফিস জানায়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।

বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় বাগেরহাট জেলার মোংলায় এবং বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায়।

তীব্র তাপপ্রবাহে খুলনার হাসপাতালগুলোয় রোগীর বাড়তি চাপ, ব্যাহত চিকিৎসা

তীব্র তাপদাহের কারণে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা সদর হাসপাতাল, খুলনা শিশু হাসপাতাল ও খুলনা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না।

রোগীরা শয্যা না পেয়ে হাসপাতালগুলোর মেঝে, বারান্দা এমনকি সিঁড়িতেও অবস্থান নিচ্ছেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় সঠিক চিকিৎসাও পাচ্ছেন না তারা।

একই অবস্থা খুলনা সিটি হাসপাতাল, গাজী হাসপাতাল, আদ-দ্বীন হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও।

খানজাহান আলী থানার মীরের ডাঙ্গায় অবস্থিত সরকারি খুলনা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। হাসপাতালটিতে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ বা শিশু কনসালটেন্ট না থাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন স্বজনদের।

অন্যদিকে, হাসপাতালটিতে ওষুধ ও স্যালাইনের পর্যাপ্ততা থাকলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ জনবল সংকট এবং জরাজীর্ণতার কারণে বিভাগীয় এ সংক্রামণ ব্যাধি হাসপাতালটি থেকে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তীব্র তাপদাহের কারণে চলতি মাসের শুরু থেকেই হাসপাতালটিতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি বমি, পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা, বমি বমি ভাব এ জাতীয় রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বইছে তাপপ্রবাহ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বইছে তাপপ্রবাহ।

চলতি মাসের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৩ শতাধিক। ভর্তি রোগী ছাড়াও প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব এ জাতীয় রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন।

হাসপাতালে ভর্তি হতে অনিচ্ছুক এসব রোগীদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালটিতে রয়েছে মাত্র ২০টি শয্যা। এর মধ্যে ১০টি শয্যা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর জন্য বরাদ্দ থাকলেও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিজস্ব উদ্যোগে ১৪টি বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাকি শয্যাগুলো অন্যান্য সংক্রামক রোগীর জন্য বরাদ্দ।

পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড নেই। নেই কোনো কেবিন ব্যবস্থা। একই ওয়ার্ডে পুরুষ ও নারীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগীর চাপ বেশি হলে ভর্তি ১৫ নম্বর রোগী থেকে পরবর্তী রোগীগুলোকে মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।

প্রতিদিন শূন্য থেকে ৪ বছর বয়সী ৪-৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত, পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এ জাতীয় শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলেও শিশু বিশেষজ্ঞ বা শিশু কনসালর্টেন্ট না থাকায় এ সব শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা বা পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

হাসপাতালটিতে শিশুদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড, বেড কিংবা কেবিনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় শিশুরাও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালটি থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বিপাকে পড়তে হয় তাদের স্বজনদের। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তাদেরকে শিশু হাসপাতাল কিংবা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুঁটতে হচ্ছে।

খুলনা শিশু হাসপাতালে অবস্থা আরও করুণ। হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আল-আমিন রকীব ইউএনবিকে জানান, আগে প্রতিদিন বহিঃবিভাগে যেখানে ৪ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা সেবা দেওয়া হতো এখন সেখানে গত এক সপ্তাহ ধরে ৭-৮ শত শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শিশু হাসপাতালে ২৭৫টি শয্যা থাকলেও এখন রোগী রয়েছে দ্বিগুণ।

খুলনা শিশু হাসপাতালে বটিয়াঘাটা থেকে ৩ বছরের শিশু আনিকাকে নিয়ে আসা তার বাবা রহিম শেখ জানান গরমে তাঁর সন্তান ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। তিনি বলেন, “সকাল ৮টায় এসেছি। এখনো ডাক্তার দেখাতে পারি নাই। বেশির ভাগ শিশু জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।”

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার হুসাইন শাফায়াত বলেন, “হাসপাতালে রোগী রাখার জায়গা নেই। হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি আছে। এদের বেশিরভাগ শিশু ও বৃদ্ধ।”

খাগড়াছড়িতে তীব্র তাপদাহে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ

তীব্র তাপদাহে খাগড়াছড়িতে জনজীবন বিপর্যস্ত। বিশেষ করে নিম্নআয়ের যেসব মানুষকে বাইরে রোদের মধ্যে কাজ করতে হয়, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। যেখানে-সেখানে পানি, শরবত ইত্যাদি পান করে অনেক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। জ্বর, শ্বাসকষ্টের রোগীও বেড়েছে খাগড়াছড়িতে।

বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ মৌসুমি রোগবালাই। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা মেলে শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বেডের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ায় মেঝেতে রোগীর সেবা দেওয়া হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০ জন রোগী নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীর বাড়তি চাপ সামাল দিতে হচ্ছে বহিঃবিভাগেও।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে একটি বেডে বিপরীতে ২ জনেরও বেশি শিশু। ইদানীং প্রতিনিয়ত জেলা আধুনিক হাসপাতালে ১৫ বেড থাকলেও চিকিৎসাধীন ৪০ জন এবং ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১০টি বেডের বিপরীতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।

চলতি মাসে এখন পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে ২০২ জন এবং ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১ ২৯ জন রোগী আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ মাসে নিউমোনিয়ায় ১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, আউটডোর ও ইনডোরে রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। রোগীদের আন্তরিকভাবে সেবা দেওয়া হচ্ছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি রয়েছেও বলে জানান তিনি।

XS
SM
MD
LG